সিদ্ধান্ত গ্রহণ

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - গৃহ ব্যবস্থাপনা | | NCTB BOOK

গৃহ ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এর প্রতিটি স্তরে বা ধাপে ছোট-বড় নানা ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। গ্রস এবং ক্রান্ডেলের মতে-সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল কথা হলো সমস্যা সমাধানে একাধিক কার্যক্রম বা পন্থা থেকে একটি বিশেষ কার্যক্রম পছন্দ করা। পরিবার যে কোনো সময় পরিবর্তিত অবস্থার বা সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন বিকল্প পন্থা থেকে সবচেয়ে উত্তম পন্থাটি বেছে নেওয়াটাই হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

একটি পরিবারের ব্যক্তিগত ও দলগত উভয় প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়। পরিবার কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে তা নির্ভর করে কাজের প্রকৃতির উপর। পরিবারের ছোটখাটো অনেক সমস্যায় এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কোনো সৃজনশীল কাজে বা কোনো জটিল সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের ভূমিকা অনেক বেশি। এক্ষেত্রে কাজটির জন্য বিকল্প উত্থাপনে একজন ব্যক্তির তুলনায় দলগত প্রভাব বেশি কার্যকর। পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে গ্রহণ করাই উত্তম। এতে কাজটি সুন্দর হয় এবং ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে ।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি বা পর্যায়

যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের কতোগুলো ধারাবাহিক পর্যায় রয়েছে। একজন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে পর্যায়ক্রমে এগুলো অনুসরণ করতে হয়। এ পর্যায়গুলো হলো-

  1. সমস্যার স্বরূপ উপলব্ধি
  2. বিকল্প অনুসন্ধান
  3. বিকল্পসমূহ সম্পর্কে চিন্তা
  4. একটি সমাধান গ্রহণ
  5. গৃহীত সিদ্ধান্তের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ

সমস্যার স্বরূপ উপলব্ধি – সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রথম পর্যায়ে যে সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে, - তার প্রকৃতি নির্ণয় করা। সমস্যার স্বরূপ অবগত না হলে সুষ্ঠু সমাধান আশা করা যায় না। সমস্যা কখনো সাধারণ আবার কখনো কঠিন বা জটিল হতে পারে। সাধারণ ছোটখাটো সমস্যায় এককভাবে সিদ্ধান্ত

নিয়ে সমাধান করা যায়। কিন্তু কঠিন সমস্যায় অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্তে পৌছাতে হয়। • সমস্যা সমাধানের বিকল্প অনুসন্ধান – সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্বিতীয় পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ এবং সমস্যা সমাধানের - সম্ভাব্য পন্থাগুলো অনুসন্ধান করা হয়। যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক বিকল্প পন্থা থাকতে পারে। বিকল্প পন্থাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও সময়ের প্রয়োজন হয়। এগুলোর সীমাবদ্ধতার কারণে সঠিক পন্থা নির্বাচন করা সম্ভব হয় না। ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দূরবর্তী কোনো স্থানে ভ্রমণে যেতে কী ধরনের যানবাহন নির্বাচন করা যুক্তিযুক্ত হবে তা যাচাই করতে হবে। অর্থ, সময়, শক্তি ইত্যাদি সম্পদ ব্যবহারের আলোকে বিকল্প ব্যবস্থাগুলো যাচাই করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়।

বিকল্পসমূহ সম্পর্কে চিন্তা- এ পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের বিকল্প পন্থাগুলো বিশদভাবে মূল্যায়ন করা হয় । প্রতিটি বিকল্পের ফলাফল, এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে দেখতে হয়। যেমন- সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হয়। তা সত্ত্বেও ভবিষ্যতে অনেক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যার ফলে কাঙ্খিত ফলাফল লাভ সম্ভব নাও হতে পারে। অনেক সময় সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন বিকল্প সম্পর্কে চিন্তা করা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে সময় নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখতে হয় কোন বিকল্প সমাধানটি বেশি কার্যকর। সিদ্ধান্তের এ পর্যায়ের জন্য প্রখর চিন্তাশক্তির প্রয়োজন ।

একটি সমাধান গ্রহণ— সিদ্ধান্ত গ্রহণের চতুর্থ স্তর হচ্ছে অনেকগুলো বিকল্প পন্থার মধ্য হতে একটি পন্থা বেছে নেওয়া। এ স্তরটি খুবই প্রভাবশালী। এটা মানুষের সমস্ত জীবনধারাকে প্রভাবিত করে। মানুষ যদিও একটি যুক্তিপূর্ণ বিকল্প খুঁজে নেয়, তবুও তারা সবচেয়ে ভালো পন্থাটা নির্বাচনের জন্য খুব কমই চেষ্টা করে। সময় এবং পারিবারিক অবস্থার দ্বারা মানুষ অনেক সময় প্রভাবিত হয়। যেমন- দোকানে সুন্দরভাবে সাজানো জিনিসপত্র দেখে আকৃষ্ট হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অল্প সময়ে সে দ্রব্য কেনাকাটা করে ফেলতে পারে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা ছাড়াও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর বয়স, চাহিদা, আয় ইত্যাদির উপর একটি সমাধান গ্রহণ অনেকাংশে নির্ভর করে। একটি সমাধান গ্রহণের সময় দেখতে হবে তা যথেষ্ট কার্যকর কি না এবং এতে মন পরিতৃপ্ত হবে কি না ।

গৃহীত সিদ্ধান্তের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ- যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো তার ফলাফল জেনে দায়িত্ব গ্রহণ করাই হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বশেষ পর্যায়। গৃহীত সিদ্ধান্তটির দায়িত্ব গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুবা পূর্ববর্তী পর্যায়গুলোর সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। সুতরাং বিকল্প বাছাইকরণের পর যে সমাধান গ্রহণ করা হলো তা কার্যকর করার জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করতেই হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব তিনিই বহন করবেন যার সাথে পরিবারের সকলের সুসম্পর্ক বিদ্যমান এবং যিনি যথেষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতন।

কাজ - পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একক সিদ্ধান্ত ও দলীয় সিদ্ধান্তের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো - তুলে ধর।

 

Content added By
Promotion